খুকি আজ খুব করে সেজেছে। টকটকে লাল রঙের একটা ফ্রক পরেছে আর মাথায় লাল রঙের ব্যান্ড। কি দারুন লাগছে খুকিকে!মিঃ আরিফ অবশ্য সাজিয়ে দিয়ে খুব এক্সপার্ট। খুকিকে অন্য দিনের মত সাজিয়ে গুজিয়ে দিয়েছেন,এবার বাইরে বেরুনোর পালা।
খুকি আজ খুব খুশি। আজ বাবার ছুটির দিন। প্রতি ছুটির দিনে খুকি বাবার সাথে ঘুরতে যায়।আজ তার ওপর আবার সপ্তম জন্মদিনে পাওয়া লাল টকটকে ফ্রকটা পরেছে সে।যাদিও খুকি লাল রঙটা চেনে না ।তবুও সে খুশি,আজ সে চিড়িয়া খানা যাবে।
চিড়িয়াখানায় বাবা খুকিকে নিয়ে ঘুরতে লাগল।মাঝে মাঝে কোলে নিয়ে, মাঝে মাঝে ঘাড়ে চড়ে ভালোই মজা পাচ্ছে খুকি। বাবা একেকটা খাঁচার সামনে যায় আর বলে দেয় কোনটা কি। যেমন বানরের খাঁচার সামনে যেতেই বানর ক্যাঁক ক্যাঁক করে উঠল।
-দেখ এটা বানর।
-না,বাবা।বল যেঃ শোন ,এটা বানর ।(খুকি প্রতিবাদ করে)
-আচ্ছা রে মা । শোন এটা বানর। হইছে?
-হ্যাঁ হইছে।
তেমনি ভাবে বাঘ ,সিংহের খাঁচার সামনে গেলেই খুকি বলেদেয় কোনটা কী । খুকি আগেও অবশ্য একবার চিড়িয়াখানায় এসেছে,তাই মনে আছে।খুকি অবশ্য সবগুলোর নাম বলতা পারেনা। যেমন- জিরাফ, গাধা। কারন, এরা তেমন শব্দ করেনা।তাই তার বাবা তাকে বুঝিয়ে বলেছে কোনটা কেমন প্রানী, কেমন দেখতে ।কিন্তু খুকি কখনো কোন প্রানী দেখেনি,জানেনা সেগুলো কেমন দেখতে ,রঙও চেনে না- লাল, নীল।তাও খুকির মনে কোন দুঃখ নেই,বাবা সবসময় তার পাশে আছে যে!চিড়িয়াখানা ঘুরে আজ অনেক মজা পেয়েছে খুকি,শেষমেশ জোর করে ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরেছে ।
মাঝে মাঝে আরিফ সাহেবের খুব কষ্ট হয়। মা মরা মেয়েটা কীভাবে দিন কাটাচ্ছে!সারাটা দিন ফুপুর সাথেই কাটে তার ।সেই ভয়ার্ত দুপুরের যেদিন পায়েলের পেইন উঠল!ইশ!খুকির দেলিভারির সময়েই...কী দুঃসহ স্মৃতি!থাক আরিফ সাহেব আর সে সব স্মৃতি মনে করতে চান না । ৭বছর কেটে গেছে সেসব হয়। তিনি আপাতত টাকা জমানো নিয়ে টেনশনে আছেন ।টাকা প্রায় জমেই গেছে ,পুরোটা জমালেই অপারেশন।এছাড়া মেয়েটার ভবিষ্যৎ- ও তো আছে ,স্কুলে ভর্তি করাতে হবে এই বয়সেই কী সুন্দর গুছিয়ে সব কথা বলে!এখনো অবশ্য স্কুলে ভর্তি হতে পারত ,কিন্তু ঐসব বিশেষ স্কুলে মেয়েকে দিতে চান না , কষ্ট হয় তার ।
একদিন সকালে উঠে খুকি তার বাবা কে বলছে।
-বাবা আমি না একটা স্বপ্ন দেখেছি।
-অ্যাঁ ?তুই স্বপ্ন দেখেছিস?নাকি আবার শুনেছিস?(হেসে হেসে)
-না,না।দেখেছি দেখেছি।
-তুই কী স্বপ্ন দেখিসরে মা ? রঙ্গীন না সাদাকালো ? মানুষজন থাকে ?
-রঙ্গীন ,সম্পুর্ন রঙ্গীন ।কিন্তু মানুষজন ছিল না ।
তাহলে কী ছিল? কী দেখলি ?
-একটা পাখি ছিল,রঙিন পাখি ।উড়ে যাচ্ছে সবুজ পাহাড়ের উপর দিয়ে। সাথে আমিও উড়তিছি,আমার সাদা দুইটা ডানা ছিল।আচ্ছা বাবা ?পাহাড় তো সবুজ-ই, তাই না ?
-হ্যাঁ রেমা, সবুজ ।দেখিস একদিন তোর স্বপ্ন সত্যিহবে।
মাঝে মঝেই খুকি এমন ঘুম থেকে উঠে উঠে বাবাকে তার স্বপ্নের কথা বলে । একদিন শুনিয়েছিল নীল রঙের সমুদ্রের ঘণ্টার প্র ঘণ্টা নিঃশব্দে ডুবে থাকার স্বপ্ন । উদ্ভট উদ্ভট স্বপ্ন দেখে মা মরা মেয়েটা!
এরপর কেটে গেছে বেশ কটা দিন ।
-বাব, এটাই কি বানর যেটা ক্যাঁক ক্যাঁক শব্দ করত?
-হ্যাঁ রে মা ।
-ঘুরতে ঘুরতে একটা পাখির খাচায় এসে চোখ আটকে যায় খুকির ।
-এটাই তো সেই পাখি যেটা আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম ।হ্যা,এটাই।
খুকি কোল থেকে নেমে হঠাত-ই দৌড়দিল।তার খুশি আর দেখে কে ?সে হয়ত পাখিটার মত উড়তে চাইছে।আরিফ সাহেবও খুকির পেছনে পেছনে দৌড়চ্ছেন।কিন্তু কে বেশি খুশি তা বোঝা যাচ্ছে না খুকি যেন সেই পাহাড়ের ওপর আকাশে উড়ছে আজ ,কিন্তু সাদা ডানা দুটো নেই।
আজ খুকির স্বপ্ন সত্যি হ্যেছে।খুকির কালময় জীবন আজ সত্যি রঙিন!!!
১৫ নভেম্বর - ২০১৬
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী